বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০২:১৮ অপরাহ্ন
বশির আলমামুন, চট্টগ্রাম:
চট্টগ্রামের পাইকারী ওষুদেরবাজার হাজারীগলির ফার্মেসিতে অতিরিক্ত দামে জীবাণুনাশক বিক্রি করার সময় হাতেনাতে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় উচ্চ মূল্যে বিক্রিরত ১৭৫লিটার হেক্সাসল ও ১১লিটার সেভলন লিকুইড জীবাণুনাশক জব্দ করা হয়। শনিবার (৬ জুন) সন্ধ্যায় হাজারীগলির ইমন মেডিক্যাল হলে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক দুইজন হলো- চন্দনাইশ থানাধীন বিনাজুরী এলাকার গোপাল দেবের ছেলে সুভাষ দেব (৪৫) ও কক্সবাজার জেলার সদর উপজেলার চৌফলদ-ি এলাকার বিরন কান্তি দে’র ছেলে শুভ দে (২২)। তারা ইমন মেডিকেলের স্টাফ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মুহাম্মদ আবদুর রউফের নেতৃত্বে পুলিশ সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালায়।
সিএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অভিযোগ ছিল ইমন মেডিকেল হলে অতিরিক্ত দামে জীবানুনাশক বিক্রি করা হচ্ছিল। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। অতিরিক্ত দামে বিক্রি করার ভাউচারও পাওয়া গেছে।
এসএম মেহেদী হাসান বলেন, দুইজনকে আটক করা হয়েছে। উচ্চ মূল্যে বিক্রিরত ১৭৫ লিটার হেক্সাসল ও ১১ লিটার সেভলন লিকুইড জীবানুনাশক জব্দ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হচ্ছে। তিনি বলেন, ফার্মেসিগুলোতে যদি ওষুধের অতিরিক্ত দাম চাওয়া হয় তাহলে সাধারণ মানুষ আমাদের কাছে জানাতে পারেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।
এদিকে ফার্মেসিতে অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রির বিষয়টি নজরে আসার পর সিএমপির সব থানা এলাকায় অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যদি কোনো ফার্মেসিতে নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ওষুধ বিক্রি করা হয় বা অসাধূ উপায়ে মজুদ করা হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনাও দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান।নগরের বাসিন্দারা সিএমপির হটলাইন (০১৮ ৮০ ৮০ ৮০ ৮০) নাম্বারে ফোন করে অভিযোগও জানাতে পারবেন। অভিযোগ পেলে ওই ফার্মেসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সিএমপির পক্ষ থেকে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক বলেন, কিছু কিছু ফার্মেসিতে ওষুধের সংকট তৈরি করে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ফার্মেসির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট থানাকে বলা হয়েছে। সিএমপির প্রতিটি থানা এলাকায় সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালাতে নির্দেশনারও দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ফার্মেসির ‘ডাকাতি’ ঠেকাতে হাজারী গলিতে নিয়মিত অভিযানের দাবি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)।
গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ক্যাব নেতারা বলেছেন, কিছু ফার্মেসি করোনাভাইরাসকে পুঁজি করে ৭৫০ টাকা দামের আইভেরা ৬ মিলিগ্রাম ৬ প্যাকেট বিক্রি করছে ২ হাজার ৪০০ টাকা।৫০ টাকার স্ক্যাবো ৬ মিলিগ্রাম প্রতি পাতা বিক্রি করছে ৫০০ টাকা, ২৫ টাকা দামের জিঙ্ক ২০০ মিলিগ্রাম প্রতি পাতা বিক্রি করছে ৫০ টাকা, ২০ টাকা দামের সিভিট ২৫০ মিলিগ্রাম প্রতি পাতা বিক্রি করছে ৫০ টাকা।৩৬০ টাকা দামের রিকোনিল ২০০ মিলিগ্রাম প্রতি প্যাকেট (৩ পাতা) বিক্রি করছে ৬০০ টাকা, ৪৮০ টাকা দামের মোনাস ১০ মিলিগ্রাম প্রতি প্যাকেট (২ পাতা) বিক্রি করছে ১ হাজার ৫০ টাকা, ৩১৫ টাকা দামের অ্যাজিথ্রোসিন ৫০০ মিলিগ্রাম প্রতি প্যাকেট (৩ পাতা) বিক্রি করছে ৬০০ টাকায়।গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে উদ্বেগের পাশাপাশি দেশের অন্যতম বড় পাইকারি ওষুধের বাজার হাজারী গলিতে নিয়মিত অভিযান চালানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রামে করোনা মহামারীতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বেসরকারি ক্লিনিক মালিকরা যেভাবে জনগণকে সেবা না দিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তেমনি ফার্মেসি মালিকেরাও জীবন রক্ষাকারী ওষুধ নিয়ে ডাকাতি শুরু করে দিয়েছে। নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করছে করোনার সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকটি ওষুধ। চট্টগ্রামের অলিগলির ফার্মেসিগুলোতে এ সব ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দাম বেশি দিলে আবার বের করে দিচ্ছে। ফার্মেসিগুলোর এই অতিরিক্তি দামে ওষুধ বিক্রি ঠেকাতে চট্টগ্রামের ওষুধের পাইকারি বাজার হাজারী গলিতে র্যাব, জেলা প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিয়মিত অভিযানের বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের ফার্মেসিগুলোতে করোনা সংশ্লিষ্ট ওষুধের অতিরিক্ত মূল্য আদায় ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে।
বিবৃতিতে দেন কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ম সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান, ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ ও সম্পাদক নিপা দাস।
ক্যাব নেতারা বলেন, ওষুধের কৃত্রিম সংকট ও দাম বেশি নেওয়ার ঘটনায় ওষুধ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ হাত থাকায় এ অপরাধীরা করোনা শুরু হবার সময় স্যানিটাইজার, ডেটল, স্যাভলন বাজার থেকে গায়েব করে ফেলে। প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু করা বা তাদের ডেকে বলার প্রয়োজনটুকু অনুভব করেনি। ফলে তারা এখন আরও বেপরোয়া হয়ে কৃত্রিম সংকট করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যা শুধু দুঃখজনক নয়, অমানবিকও বটে।
ভয়েস/আআ